গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করুন

গুগল এডসেন্স কি

গুগল এ্যাডসেন্স হলো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ্যাডভারটাইজিং মাধ্যম, যার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে গুগলের বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা ইনকাম করা যায়। এ্যাডসেন্স গুগল এর একটি প্রতিষ্ঠান, গুগল এ্যাডসেন্স অনলাইন ভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন দাতা সংস্থা। সহজ ভাষায় এ্যাডসেন্স হচ্ছে ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য সব চেয়ে ভাল মাধ্যম। যদি একটি ভাল মানের ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকে তাহলে খুব সহজেই শত শত ডলার ইনকাম করা যায় এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে। গুগল এ্যাডসেন্স হল সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের একটা সার্ভিস। এটার মাধ্যমে গুগল ব্লগারদের ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এবং তার বিনিময়ে ব্লগারদেরকে টাকা দেয়। ব্লগ থেকে ইনকামের এটাই সবচেয়ে বড় এবং বহুল ব্যাবহৃত উপায়। এ্যাডসেন্স হল বিশ্ব বিখ্যাত গুগলের একটি এডভারটাইজিং এজেন্সি। বিভিন্ন পন্যের/সেবার প্রচার ও বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই এ্যাডসেন্স এর নিকট চুক্তিবদ্ধ। তারা তাদের পন্য/সেবার প্রচার ও বিক্রয়ের জন্য এ্যাডসেন্সকে অর্থ প্রদান করে। এ্যাডসেন্স তাদের পন্য/সেবার বিজ্ঞাপন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রচার করে। এই প্রচার বাবদ এ্যাডসেন্স কর্তৃপক্ষ তার প্রাপ্য  অর্থে একটি অংশ ওয়েবসাইটের মালিক গনকে প্রদান করে। গুগল এ্যাডসেন্স গুগল কোম্পানির একটি এ্যাড ইউনিট। সহজ ভাষায় বললে, আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট বা ইউটিউব ভিডিও থাকে, আপনি গুগল কে বলতে পারেন যে আমার এই ওয়েবসাইট বা ভিডিও আছে, আমি এ্যাড দিতে চাই। তখন গুগল আপনার ওয়েবসাইট বা ভিডিওর সাথে এমন কিছু এ্যাড দিবে যেগুলো বসানোর পরে মানুষ যখন ক্লিক করবে বা দেখবে, সেই সমায় থেকে এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে গুগল থেকে আয় শুরু হবে এবং গুগল আপনাকে টাকা দেবে। গুগল এই টাকা টা নেয় এ্যাড গুলোর আসল মালিক বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে। গুগল এ্যাডসেন্স এর শর্ত পূরণ করে এমন যে কোনও ওয়েবসাইটের সাথে যে কেউ এ্যাডসেন্স প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারে। গুগল এ্যাডসেন্স ডেস্কটপ, ওয়েবসাইট, ভিডিও, গেমস, মোবাইল অ্যাপস এবং আরও অনেক কিছুর জন্য উন্মুক্ত। গুগল এ্যাডসেন্স আসলে গুগলের একটি এ্যাড নেটওয়ার্ক যারা প্রকাশক এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের মাঝে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে।




এডসেন্স কয় ধরণের?

এ্যাডসেন্স একাউন্ট ২ ধরনের। একটি হচ্ছে হোস্টেড একাউন্ট আরেকটি হচ্ছে নন-হোস্টেড একাউন্ট। হোস্টেড একাউন্ট হচ্ছে ইউটিউব এবং ব্লগস্পট ব্লগ এর জন্য। এই একাউন্ট এর এ্যাড ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা যাবে না। আর নন-হোস্টেড একাউন্ট হচ্ছে এর এ্যাড ওয়েবসাইট, এপস যে কোন কিছুতে ব্যবহার করা যাবে।

গুগোল এ্যাডসেন্স একাউন্ট তৈরী

এ্যাডসেন্স একাউন্ট তৈরী করার জন্য একটি জিমেইল একাউন্ট থাকতে হবে। এ্যাডসেন্স রেজিষ্ট্রেশনের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে https://www.google.com/adsense/start/# যেতে হবে। তারপর এখানে গিয়ে সাইন আপ নাউ এ ক্লিক করে নিজের নাম, ঠিকানা, ওয়েবসাইটের পরিচিতি দিতে হবে। এরপরে ওয়েবসাইট লিংক অথবা ইউটিউব চ্যানেল লিংক দিতে হবে এবং ইমেইল দিয়ে ইয়েস সিলেক্ট করে সেভ এন্ড কন্টিনিউ তে ক্লিক করে পরের স্টেপ এ যেতে হবে। আপনার নাম এবং ব্যাংক একাউন্ট নাম সেম (একই) হতে হবে। এই নাম ব্যবহার করে আপনার বাসার ঠিকানা দিয়ে সাইনআপ কমপ্লিট করতে হবে। ঠিকানাটা খুব সতর্কতারসহিত দিতে হবে কারণ এই ঠিকানায় আপনাকে পিন পাঠাবে ভেরিফাই করার জন্য। এভাবেই এ্যাডসেন্স একাউন্ট খুলতে হয়।

এরপর আপনার ওয়েবসাইট অথবা চ্যানেল রিভিউ করবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এপ্রুভ করে ফেলবে। আর এপ্রুভ করলেই আপনি আপনার ওয়েবসাইট/ব্লগ/চ্যানেল এ বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন।

কিকি উপায়ে এ্যাডসেন্স থেকে আয় করা যায়?

ব্লগ/ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে:

এ্যাডসেন্স থেকে ইনকাম করার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে ব্লগ/ওয়েবসাইট। এই জন্য একটি মানসম্মত ওয়েবসাইট থাকতে হবে। ওয়েবসাইটে গুগল পলিসি অনুসরণ করে কনটেন্ট/পোস্ট থাকতে হবে। ওয়েবসাইটটি সুন্দরভাবে সাজানো গুছানো থাকতে হবে। নিম্নোলিখিত বিষয়গুলো অনুসরন করলে সহজেই এ্যাডসেন্স এর জন্য একাউন্ট পাওয়া যাবে।

  • অবশ্যই ভাল কোয়ালিটির ২৫-৩০ টি পোস্ট থাকতে হবে, পোস্টগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজানো থাকতে হবে।
  • এই ওয়েবসাইটে অন্য কোন কোম্পানীর এ্যাড থাকা যাবে না এবং একাউন্ট পাওয়ার পর অন্য কোম্পানীর এ্যাড ব্যবহার করা যাবেনা।
  • সম্পুর্ণ নিজের ইউনিক আর্টিকেল থাকতে হবে কপি পেস্ট হলে চলবে না।
  • একটি টপ লেভেল ডোমেইন (.com, .net, .org) থাকতে হবে, ফ্রী সাইট হলে হবে না।
  • এডাল্ট কনটেন্ট, কপিরাইট কনটেন্ট, হ্যাকিং কনটেন্ট, ক্রাইম, ইলিগ্যাল ড্রাগ রিলেটেড কনটেন্ট থাকা যাবে না।
  • ডোমেইন এর বয়স কমপক্ষে ৩-৪ মাস হলে ভাল, তবে অনেকে এর কম সময় দিয়েও অনুমোদন পাচ্ছে।

এগুলো মেনে এপ্লাই করলে ওয়েবসাইটটি এ্যাডসেন্স কতৃপক্ষ এপ্রুভ করবে। তারপর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে ইনকাম করা যবে। কিন্তু কোন কারণে যদি ওয়েবসাইটি এপ্রুভ না করে তাহলে এডসেন্স এর বিকল্প এ্যাড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইউটিউব ভিডিও এর মাধ্যমে

এ্যাডসেন্স থেকে টাকা আয় করার আরেকটি উপায় হল ইউটিউব ভিডিও। যদি ব্লগিং ভাল না লাগে অথবা ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট না পারা গেলে ইউটিউব ভিডিও নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এজন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকা লাগবে এবং সেখানে ভাল ভাল কনটেন্ট থাকাতে হবে। কারণ ভাল কনটেন্ট না থাকলে ভাল ভিউ পাওয়া যাবে না, আর ভিউ না পেলে ইনকাম ও হবেনা। ইউটিউব ভিডিও থেকে ইনকাম করতে হলে নিচের বিষয়গুলো জানা জরুরী।

  • চ্যানেলটি সাজানো গোছানো থাকতে হবে, যেন প্রফেশনাল আউটলুক দেখা যায়।
  • ভাল ভাল ভিডিও থাকতে হবে যেগুলো দর্শকরা দেখবে এবং পছন্দ করবে।
  • ভিডিওগুলো ইউনিক অর্থাৎ নিজের তৈরী করা হতে হবে কপি করা যাবে না। কপি করলে ইউটিউব চ্যানেল ব্যান করে দিবে।
  • এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য চ্যানেল এর মোট ভিউ ১০,০০০ হতে হবে।

এন্ড্রয়েড এপস এর মাধ্যমে

এন্ড্রয়েড এপস এর মাধ্যমে আয় করতে চাইলে প্রথমে একটি ওয়েবসাইট দিয়ে এ্যাডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভ করিয়ে নিতে হবে। এপ্রুভ হওয়ার পর এপস এ গুগল এর বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে। এপস থেকে ইনকাম করার জন্য নিম্নোলিখিত বিষয়গুলি অনুসরন করতে হবে।

  • ভাল মানের একটি এপস বানাতে হবে যেন ইউজাররা এটা বেশি বেশি ব্যবহার করে।
  • ইলিগ্যাল কোন কাজের জন্য এপস বানানো যাবেনা, বানালে এ্যাডসেন্স থেকে একাউন্ট ব্যান করে দিবে।
  • এপস বানানোর পর প্লেস্টোর এ আপলোড দিতে হবে।
  • আপলোড দেয়ার পর মার্কেটিং করতে হবে যেন মানুষ এপসটি ব্যবহার করে কারণ যত বেশি ইউজার হবে ইনকাম তত ভাল হবে।

বাংলা ওয়েবসাইটে এ্যাডসেন্স এ এ্যাড দেখানো যায় কিনা?

গুগল এখন বাংলা সাইটে এ্যাডসেন্স এর এ্যাড দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলা কনটেন্ট এর Publisher এর জন্য এ্যাডসেন্স একটি সহজ পদ্ধতি দিচ্ছে এবং Advertiser দেরও সহজে বাংলা ভাষার দর্শকদের কাছে Relavent এ্যাড এর মাধ্যমে পৌছানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। পৃথিবীর মোট ৪১ টি ভাষা এ্যাডসেন্স সাপোর্ট করে। এতদিন এই তালিকায় বাংলা ভাষা ছিলনা, অবশেষে এই তালিকায় বাংলা ভাষাও যুক্ত হয়েছে। যাই হোক এখন থেকে বাংলা সাইটের প্রকাশকদের আর এ্যাডসেন্স এর বিকল্প খুজতে হবে না বা অবৈধভাবে কিভাবে এ্যাডসেন্স ব্যবহার করা যায় সেটা শিখতে হবে না। পুরোপুরি বৈধভাবেই ব্যবহার করা যাবে। বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে একটু বেশি এডভান্স হতে হবে। কারন বাংলায় ভালো CPC কিওয়ার্ড পাওয়া কষ্টসাধ্য। বাংলায় ওয়েবসাইট হলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক শক্তিশালী হতে হবে।

এ্যাডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভ/ অনুমোদন হওয়ার প্রধান শর্ত সমুহঃ

  • ব্লগের অবশ্যই একটি কাষ্টম ডোমেইন নেম থাকতে হবে যেমন গুগল ডট কম। অনেকেই দেখা যায় যে ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেসে একটা ব্লগ করে বা একটা ফ্রি ডোমেইন নিয়ে ফ্রী হোস্টিং এ হোস্ট করে এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করেন। এ অবস্থায় একাউন্ট অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%।
  • ব্লগ বা ওয়েবসাইট নুন্যতম ৬ মাস পুরনো হতে হবে। ব্যাতিক্রম হতে পারে যদি ওয়েবসাইট ক্যাটেগরি একক হয় এবং সুন্দর করে সাজাতে পারলে ১ মাসেও সম্ভব।
  • ওয়েবসাইটটিতে কমপক্ষে ৩০-৩৫ টা ইউনিক পোস্ট থাকতে হবে। অবশ্যই ওয়েবসাইটের ক্যাটেগরির সাথে মিল থাকতে হবে।
  • অবশ্যই ১০-১২টা ভালো কুয়ালিটির আরটিকেল থাকতে হবে।
  • বেসিক সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করা জরুরী। এটা গুগল কে বোঝাতে সাহায্য করে যে, ওয়েবসাইট ভিজিটর পেতে তৈরি।
  • অন্য কোন কোম্পানির এ্যাড থাকা যাবে না।
  • পপ-আপ উইন্ডো যেমনঃ ফেসবুক লাইক বক্স থাকা যাবে না।
  • কপি-পেস্ট কন্টেন্ট থাকা যাবে না।
  • কপিরাইট আইন ভঙ্গ করে এমন কিছু রাখা যাবে না।
  • এডাল্ট, হ্যাকিং, কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে এমন কোন কন্টেন্ট থাকা যাবে না।
  • ভালো ভিজিটর থাকতে হবে।
  • টপ লেভেল ডোমেইন হতে হবে। অর্থাৎ সাব-ডোমেইন হলে একাউন্ট এপ্রুভ হবে না।
  • হোম পেইজ/লেন্ডিং পেইজ সিম্পল রাখলে ভালো। সাইট লোডিং টাইম ৩ সেকেন্ডের মধ্যে হতে হবে, কারন গুগল স্লো সাইট পছন্দ করেনা।

উপরের এই বিষয় গুলি মেনে চললেই পাওয়া যেতে পারে এ্যাডসেন্স একাউন্ট ।

যে বিষয়গুলি গুগোল এ্যাডসেন্স সমর্থন করেনা

  • পর্নোগ্রাফি বা প্রাপ্তবয়স্কদের সাইট ব্যবহার করা যাবেনা।
  • আক্রমনাত্মক, সহিংসতা ইত্যাদি প্রচার করা যাবেনা।
  • কপিরাইট আইন ভঙ্গ করে এমন কিছু রাখা যাবেনা।
  • ক্লিক করার জন্য ভিজিটরকে অনুরোধ করা যাবেনা।
  • মাদক, মদ, সিগারেট এইধরনের কোনকিছুর প্রচারনা বা বিক্রি করা যাবেনা।
  • ভিজিটরদের বিরক্তি তৈরী করে এমন বক্তব্য প্রকাশ করা যাবেনা।

এ্যাডসেন্স পাওয়ার পর যে জিনিসগুলো করা যাবে না

  • কোন কপি কনটেন্ট দেওয়া যাবে না।
  • ভুলেও নিজের এ্যাড এ নিজে ক্লিক করা যাবেনা। তাহলে এ্যাডসেন্স একাউন্টটিই ব্যান হয়ে যাবে।
  • হ্যাকিং, পাইরেসী, ক্রাইম এই রিলেটেড পোস্ট দেওয়া যাবে না।
  • পোস্ট এর ইমেজগুলো গুগল থেকে ডাউনলোড করে দেয়া যাবে না। নিজে বানিয়ে দিতে হবে।
  • সাইটে কোন প্রকার এডাল্ট কনটেন্ট দেয়া যাবে না।

এগুলো মেনে চললেই এ্যাডসেন্স একাউন্টটি নিরাপদ রাখা যাবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড কিভাবে বসানো যায়?

এ্যাডসেন্স অনুমোদিত হয়ে গেলে এর কোড ওয়েবসাইটে বসাতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট বানালে প্লাগইন ব্যবহার করতে হবে। এখানে ‘Advance Ads’ প্লাগইন টি ব্যবহার করা যেতে পারে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ১ম ধাপ:

এডসেন্স একাউন্টে লগইন করতে হবে। My Ads>New ad unit এ ক্লিক করতে হবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ২য় ধাপ:

‘New add unit’ এ ক্লিক করলে একটি উইন্ডো ওপেন হবে। এখান থেকে যেকোন একটি টাইপ সিলেক্ট করতে হবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ৩য় ধাপ:

টাইপ সিলেক্ট করার পর এ্যাড উনিট এর নাম দিতে হবে। এ্যাড যদি হেডার ব্যানার হয় তাহলে নাম দিতে হবে Head Banner। এর পর ‘Ad Type’ সিলেক্ট করতে হবে, কোন ধরনের এ্যাড চাই শুধু টেক্সট এ্যাড চাই নাকি ছবি সহ তা উল্লেখ করতে হবে। এ্যাড সাইজ যেটা দেয়া থাকে ‘Responsive’ সেটা রাখাই ভালো। তাহলে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে সকল এ্যাড ই আসবে। এর পরে ‘Save and get code’ ক্লিক করতে হবে। এটা একদম নিচের দিকে আছে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ৪র্থ ধাপ:

এর পরে গুগল আমাকে আমার নির্ধারিত ওয়েবসাইটের কোড দিয়ে দিবে। এখন এই কোডের উপর ক্লিক করলেই কপি অপশন আসবে। এরপর কোড কপি করে নিতে হবে এবং এই কোড আমার ওয়েবসাইটে বসাতে হবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ৫ম ধাপ:

এরপরে ওয়ার্ডপ্রেস ড্যাশবোর্ড থেকে Advance Ads>Ads ক্লিক করতে হবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ৬ষ্ঠ ধাপ:

এরপর এ্যাডস এর ভিতর থেকে “New Ads” এ ক্লিক করতে হবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ৭ম ধাপ:

‘New Ads’ ক্লিক করার পর একটি উইন্ডো আসবে। এখানে নতুন এ্যাড এর একটি নাম দিতে হবে। এরপর একদম নিচে এ্যাডসেন্স এ্যাডস এ টিক দিতে হবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ৮ম ধাপ:

এখানে উইন্ডোতে মাঝের খালি জায়গায় এ্যাডসেন্স থেকে পাওয়া কোড টি বসাতে হবে। এরপর

‘Get Details’ এ ক্লিক করতে হবে। এখানে পাবলিশার আইডি এবং এ্যাড ডিটেইলস চলে আসবে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ৯ম ধাপ:

সর্বশেষ ডান দিকে ‘Publish’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপরে একটু সময় নিয়ে অপেক্ষা করলে দেখা যাবে যে এ্যাডটি তৈরি হয়ে গেছে।

গুগল এ্যাডসেন্স কোড বসানোর ১০ম ধাপ:

১৫-২০ মিনিট পর ব্রাউজার দিয়ে ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। এবারে দেখা যাবে এ্যাডটি ওয়েবসাইটে চলে এসেছে।

ইউটিউব চ্যানেল এর সাথে এ্যাডসেন্স করার পক্রিয়া:

১ম ধাপ:  ইউটিউব চ্যানেল এর সাথে এ্যাডসেন্স এ্যাড করতে আগে কোন ঝামেলা ছিলোনা, কিন্তু কিছু দিন আগে ইউটিউব এর নিতিমালার কিছু পরিবর্তন করেছে। এই পরিবর্তন টা হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেলের মোট ভিউ ১০,০০০ এর বেশি হতে হবে, তারপর এ্যাডসেন্স একাউন্ট এর জন্য আবেদন করা যাবে।

২য় ধাপ: ইউটিউব চ্যানেলের মোট ভিউ  ১০,০০০ এর বেশি হওয়ার পর গুগল এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করা যাবে। প্রথমে ব্রাউজার এর কুকিজ গুলা ডিলিট করে নিতে হবে। তার পর যে জিমেল দিয়ে এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করা হবে সে জিমেল টা গুগল এ লগইন করে নিতে হবে। এর পর youtube.com এ যেতে হবে এবং চ্যানেল লগইন করে নিতে হবে, যদি গুগল এ লগইন করা জিমেল ও চ্যানেল এর জিমেল একাউন্ট এক না হয়, তাহলে এ্যাড একাউন্ট এ ক্লিক করে চ্যানেল এর জিমেল একাউন্ট টা এ্যাড (যোগ) করে নিতে হবে। জিমেল একাউন্ট এ্যাড (যোগ) করার পর যে চ্যানেল এর জন্য এ্যাডসেন্স একাউন্ট আবেদন করা হবে ঐ চ্যানেল লগইন করে নিতে হবে। লগইন করার পর চ্যানেল এর আইকন এ ক্লিক করতে হবে তার পর Creator Studio লেখা বাটনে ক্লিক করতে হবে। এর পর Channel লেখা বাটনে ক্লিক করতে হবে। Channel লেখা বাটনে ক্লিক করার পর, চ্যানেল এর মনিটাইজ চালু (Enable) করতে হবে, এটা চালু না করলে এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করা বা চ্যানেলে এ্যাডসেন্স এ্যাড করানো যাবে না।

৩য় ধাপ: Channel এ ক্লিক করার পর একটি পেইজ আসবে এখান থেকে মনিটাইজ নামের অপশন টা ইনাবল (Enable) করতে হবে। যদি মনিটাইজ এর নিচে কোন ইনাবল বাটন না থাকে, এর কারন হচ্ছে ইউটিউব বাংলাদেশে চ্যানেল মনিটাইজ করার অনুমতি দেয় নাই। যদি মনিটাইজ করার অনুমতি দিতো তাহলে টিক চিহ্ন দেওয়া ইনাবল বাটন এর মত একটি বাটন থাকতো মনিটাইজ এর নিচে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে যদি আমরা মনিটাইজ চালু করতে চাই, তাহলে ইউটিউব চ্যানেল এর country change করতে হবে। country change করার জন্য পেইজ এর বাম পাসে Channel এর নিচে Advanced নামের একটা অপশন আছে, ওটাতে ক্লিক করতে হবে, ক্লিক করার পর country change করে ইনন্ডিয়া দিতে হবে। country change করার পর পেইজটার নিচের দিকে গিয়ে save বাটনে ক্লিক করতে হবে। পেইজটা  save হওয়ার পর আবার Channel এ ক্লিক করতে হবে। এবার দেখা যাবে মনিটাইজ অপশন এর নিচে ইনাবল বাটন চলে এসেছে। এখন মনিটাইজ চালু করার জন্য ইনাবল অপশন এ ক্লিক করতে হবে। এরপর যে পেইজ আসবে সেখানে ‍START বাটনে এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর এখানে একটি পেইজ আসবে। পেইজটি আসার পর তিন খালি ঘরে টিক মার্ক দিয়ে I Accept এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর আগের পেইজটিতে চলে আসবে এবং আসার পর দেখা যাবে আগের পেইজটির কিছু পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তনটা হচ্ছে START বাটনটা adsense সাইন আপ এর বরাবর চলে এসেছে। তার মানে হচ্ছে এখন adsense এর জন্য সাইন আপ করতে পারবো, অথবা adsense এর জন্য আবেদন করতে পারবো। আবেদন কারার জন্য আবার START বাটন এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর একটি পেইজ আসবে এখান থেকে Next বাটনে এ ক্লিক করতে হবে। Next এ ক্লিক করার পর একটি পেইজ আসবে এবং পেইজটি আসার পর এখানে একটি জিমেইল  আইডি দেখা যাবে। এই জিমেইল  আইডি দেখানোর কারন হচ্ছে, এখন এই জিমেইল আইডি দিয়ে Adsense এর জন্য আবেদন করতে যাচ্ছি। যদি এই জিমেইল আইডি দিয়ে Adsense করতে না চাই, তাহলে আবার পিছনের পেইজ এ চলে যেতে হবে এবং google.com পেইজ এ গিয়ে যে জিমেইল দিয়ে Adsense করতে চাই সেই জিমেইল একাউন্টটা আগে লগইন করতে হবে। আর যদি পেইজ এ দেখানো জিমেইল ঠিক থাকে তাহলে Yes এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর একটি পেইজ আসবে এবং পেইজটি আসার পর Save and continue তে ক্লিক করতে হবে। তবে ক্লিক করার পূর্বে অবশ্যই পেইজ থেকে দেখে নিতে হবে জিমেইলটা ঠিক আছে কিনা? তারপর Save and continue তে ক্লিক করার পর একটি পেইজ ফরম আকারে আসবে। এই ফরম পেইজটি আসার পর এখন কাজ হচ্ছে, সত্য ইনফরমেসন দিয়ে পেইজ ফরম এর খালি ঘর গুলি পুরন করা। ফরমটা কি ভাবে ফিলাপ করতে হবে তাহা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১) যে দেশের ব্যাংক একাউন্ট থেকে এই এ্যাডসেন্স এর টাকা উঠানো হবে, ঐ দেশ এখানে সিলেক্ট করতে হবে। যেমন আমি বাংলাদেশের ব্যাংক গুলোর মাধ্যমে টাকা তুলতে চাই সে জন্য আমি বাংলাদেশ দিলাম।

২) এক নাম্বারে যে দেশ সিলেক্ট করে দেওয়া হবে এইখানে ঐ দেশের টাইম জোন দিতে হবে। যেমন আমি বাংলাদেশ দিলাম তাহলে আমাকে বাংলাদেশের টাইম জোন দিতে হবে।

৩) একাউন্ট টাইপ যেমন আছে তেমন থাকাই ভাল।

৪) যার নামে এ্যাডসেন্স একাউন্টটি খুলতে চাই তার নাম দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে বানান যেন ভুল না হয়।

৫) এপর হচ্ছে ‍Address line 1 ও Address line 2 দুটি খালি ঘর, এই দুই ঘরে সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখতে হবে, যেমন: বাড়ির নাম ও বাড়ির রোড, গ্রামের নাম, উপজেলার নাম, এই গুলি ১২৮ অক্ষরের ভিতরে লিখে Address line 1 এবং Adderss line 2 এ ভাগ করে দিতে হবে। যাতে Adderss line 1 এ ৬৪ অক্ষরের বেশি না হয় এবং Address line 2 তে ও ৬৪ অক্ষরের বেশি না হয়। আবার খেয়াল রাখতে হবে কোন নাম যাতে ২ ভাগ না হয়।

৬)  তারপর city এর ঘরে city নাম লিখে দিতে হবে, আর গ্রাম এর জন্য নিজ জেলার নাম দিতে হবে।

৭) postal code এর ঘরে পোষ্ট অফিস এর কোড নাম্বার দিতে হবে।

৮) সবসময় ব্যবহার করা হয় এমন একটি ফোন নাম্বার এখানে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে একই নাম্বার যাতে দুই Adsense এ ব্যবহার করা না হয়।

৯) এখানের সব Yes এর খালি ঘরে টিক দিতে হবে।

১০) সব কিছু পূরন করার পরে Submit my application এ ক্লিক করতে হবে। তার পর একটি পেইজ আসবে এবং পেইজটি আসার পর এক নজর পেইজটি পড়ে নিতে হবে। এখানে Adsense এর সব নীতিমালা দেওয়া আছে এগুলা মেনে চলতে পারলে Adsense কখনো একাউন্টটি বেন্ড বা ব্লক করবে না। পড়া শেষে Yes, I have read and accept এর খালি ঘরে টিক দিতে হবে এবং Accept এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর কিছুক্ষন অপেক্ষ করে দেখা যাবে এই পেইজটা রিডাইরেক্ট হয়ে ইউটিউব এ চলে যাবে। রিডাইরেক্ট হওয়ার পর একটি পেইজ আসবে এখান থেকে START বাটন এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর একটি পেইজ আসবে এবং পেইজটি আসার পর Save এ ক্লিক করতে হবে। এখন এই ধাপে চ্যানেল এ যদি ১০০০ এর বেশি ভিউ থাকে তাহলে নিজে নিজে একটিব হয়ে যাবে, অথবা এটার পাসেও একটা  START বাটন থাকবে ওটাতে ক্লিক করতে হবে এবং যদি কোন অপশন আসে তবে সব গুলা Yes এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর চ্যানেলটি এ্যাডসেন্স কতৃপক্ষ রিভিউ করবে, রিভিউ করার পর যদি চ্যানেল এ এ্যাড দেওয়ার মত হয়, তহলে এ্যাড দিবে।

 

এ্যাডসেন্স কিভাবে হিসাব করে বিজ্ঞাপনের টাকা পরিশোধ করে? 

CPC হলো Cost Per Click: গুগল এ্যাডসেন্স থেকে আয়ের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো CPC। ওয়েবসাইটের ভিজিটর যতবার এ্যাড এ ক্লিক করবে ততবার নির্দিষ্ট টাকা গুগল থেকে পাওয়া যাবে। তারমানে এই না, নিজেই নিজের এ্যাডে এ ক্লিক করা যাবে। প্রকাশক নিজের এ্যাড এ নিজে ক্লিক করা কঠোরভাবে নিষেধ। এটি দ্বারা বিজ্ঞাপনের প্রতি ক্লিক এর জন্য এ্যাডসেন্স কত ডলার পরিশোধ করবে সেটি বুঝানো হয়েছে। যার ক্লিক রেট যত বেশি তার আয়ও বেশি। CPC রেট ০.০৩ ডলার, সেই ক্ষেত্রে প্রতি এ্যাড ক্লিক এর জন্য পাওয়া যাবে ০.০৩ ডলার

CPM হলো Cost per thousand Impression: প্রতি ১০০ জনের থেকে আয় কত হচ্ছে তার হিসাব এটি। অর্থাৎ ওয়েবসাইটের ভিজিটর এ্যাড যতবার ভিউ করলো। প্রতি এক হাজার বার ভিউ এর জন্যে গুগল নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পে করবে।

CTR হলো Click Through Rate: একটি ওয়েবসাইটের বা ব্লগের বিজ্ঞাপনের মোট ভিউ এর মধ্যে কতবার  বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা হয়েছে সেটি বুঝাতে CTR ব্যবহার করা হয়। উদাহরন হিসেবে ওয়েবসাইটের বা ব্লগের বিভিন্ন পেইজে ১০০ বার ভিউ হয়েছে এবং এ্যাড এ মাত্র ১০ ভিজিটর ক্লিক করেছে। সেক্ষেত্রে CTR হবে ১০%। আবার যদি পেইজে ভিউ হয় ১০০ এবং ৫০ বার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা হয় তাহলে CTR হবে ৫০%। CTR দ্বারা শুধুমাত্র পেইজে বিজ্ঞাপনের মোট ভিজিটরের ভিউয়ের ক্লিক সংখ্যা হিসাব করা হয়। এটা হচ্ছে কত শতাংশ ভিজিটর এ্যাড এ ক্লিক করলো। কত ভিজিটর ওয়েবসাইটে এ্যাড দেখে এবং তারমধ্যে কতজন ক্লিক করে তা হিসেব করা হয় এটা দিয়ে। ওয়েবসাইটের একটা পেজ এ যদি ৫০০ জন আসে এবং ৫ জন ক্লিক করে তাহলে CTR হল ১%। সাধারণত CTR ২-৫% হওয়া ভালো। যদি বেশি CPC কিওয়ার্ড দিয়ে আর্টিকেল সাজানো যায় তবে ২-৫% CTR দিয়েও খুব ভালো ইনকাম করা যায়। CTR ১৫% এর বেশি গেলে একাউন্ট বাতিল হয়ে যাবে। গুগল মনে করে ২-৫% CTR স্ট্যান্ডার্ড। এর বেশি মানে প্রকাশক নিজে বিভিন্ন উপায়ে এ্যাড এ ক্লিক করাচ্ছে যা গুগল এর নীতির বাইরে। সাইটে যত বেশি ভিজিটর আসবে তত বেশি CPM হবে। আর CPM বাড়লে CTR এমনিতেই বাড়তে থাকবে। সর্বদা CTR খেয়াল রাখতে হবে। CTR ১০% এর বেশি হয়ে গেলে এ্যাড অফ করে দিতে হবে। ১ দিন অপেক্ষা করে দেখতে হবে CTR রেট কমে আসলে আবার এ্যাড ডিস্প্লে করতে হবে। CTR এবং ভিজিটর ডিটেইলস পেতে গুগল এনালাইটিক্স ব্যাবহার করা যেতে পারে। গুগল এনালাইটিক্স অত্যন্ত শক্তিশালী একটি টুল ওয়েব মাস্টারদের জন্যে।

PPC হলো Pay Per Click: বিজ্ঞাপনদাতার উপর গুগল এই মেথড ফলো করে। এর মানে ওয়েবসাইট এ যে বিজ্ঞাপন গুগল দিবে তার উপর প্রতি ক্লিকে গুগল বিজ্ঞাপনদাতা থেকে যে অর্থ নিবে সেটাই PPC।

Click (ক্লিক) কি: গুগল এ্যাডসেন্স এর ক্ষেত্রে ক্লিক বলতে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন ক্লিককে বুঝানো হয়। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের পেইজে কতগুলি ক্লিক হয়েছে সেটি নির্দেশ করে না।

Impression কি: এটি দ্বারা ওয়েবসাইটের বা ব্লগের প্রত্যেকটি Page View কে বুঝানো হয়ে থাকে। অধিকিন্তু ওয়েবসাইটের বা ব্লগের Page View, Ad View সহ কোন Individual View কেও নির্দেশ করে। সাধারনত Impression তিন ধরনের হয়ে থাকে যথা: Page View, Page Impression, Ad Impression।

Page View কি: Page View বলতে ওয়েবসাইটের বা ব্লগের Page এর মাধ্যমে কতটি বিজ্ঞাপন দেখতে পেয়েছে। ধরাযাক ওয়েবসাইটের বা ব্লগের Page এ মোট তিনটি বিজ্ঞাপন রয়েছে কিন্তু ভিজিটর ঐ পেইজের সবগুলি বিজ্ঞাপন দেখেনি অর্থাৎ একটি বিজ্ঞাপন নিচের দিকে থাকার কারনে সেটি ব্রাউজার ক্লিক করে নি। সেজন্য এখানে Page View হিসেবে ২ গননা করা হবে।

Page Impression কি: Page View এবং Page Impression একই বিষয়/জিনিস। দুটি দ্বারা প্রায় একই ধরনের বিষয় বুঝানো হয়ে থাকে।

Ad Impression কি: এটি দ্বার ওয়েবসাইটের বা ব্লগের প্রত্যেকটি পেইজের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের হিসাব গননা করা হয়। ধরাযাক ওয়েবসাইটের বা ব্লগের একটি পোষ্টে ৩ (তিন) টি বিজ্ঞাপন রয়েছে এবং পোষ্টটি সর্বোমোট ৫ বার ভিজিট করা হয়েছে এক্ষেত্রে Ad Impression হিসাব করা হবে (৩x৫) = ১৫ অর্থাৎ কাঙ্কিত পোষ্টের ১৫ Ad Impression গননা করা হবে।

RPM (Revenue Per Mile) কি: এটি দ্বারা ওয়েবসাইটের বা ব্লগের বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক ব্যতীত শুধুমাত্র প্রতি ১০০০ পেইজ ভিউ হিসেবে কত ডলার দেওয়া হবে সেটি গননা করা হয়। ধরাযাক ওয়েবসাইটের বা ব্লগের বিজ্ঞাপনের RPM ১.২৫ ডলার সেইক্ষেত্রে গুগল ওয়েবসাইটের বা ব্লগের বিজ্ঞাপনের প্রতি ১০০০ বার ভিউ এর জন্য ১.২৫ ডলার পরিশোধ করবে।

CTR, CPC RPM এর সর্বমোট হিসাব:

উদহরন: মনেকরি ওয়েবসাইটে বা ব্লগে প্রতি মাসে এক লক্ষ পেইজ ভিউ হয় এবং ওয়েবসাইটে বা ব্লগে CTR ৩%। অর্থাৎ প্রতি একশত পেইজ ভিউ এর মধ্যে মাত্র তিন জন ওয়েবসাইটের বা ব্লগের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে। এ ক্ষেত্রে নীট CTR হবে (মোট ভিউ x CTR ÷ ১০০) অর্থাৎ (১০০,০০০ x ৩ ÷ ১০০) = ৩০০০ বার। ওয়েবসাইটের বা ব্লগের এক লক্ষ পেইজ ভিউ এর মধ্যে ৩০০০ জন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেছে। সেই হিসাবে ওয়েবসাইটের বা ব্লগের CPC রেট ০.০৩ ডলার হয়ে থাকলে মোট ক্লিক রেট হবে (৩০০০ x ০.০৩) = ৯০ ডলার। অর্থাৎ এক লক্ষ পেইজ ভিউয়ার এর মধ্যে ৩০০০ বিজ্ঞাপন ক্লিক এর কারনে গুগল ৯০ ডলার পরিশোধ করবে। অন্যদিকে ওয়েবসাইটের বা ব্লগের বিজ্ঞাপনের RPM ১.২৫ ডলার হলে মোট ভিউ হিসাব করে (মোট ভিউ ÷ ১০০০ x ১.২৫) অর্থাৎ (১০০,০০০ ÷ ১০০০ x ১.২৫) = ১২৫ ডলার। CTR ব্যতীত শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের ভিউয়ের জন্য গুগল আরো ১২৫ ডলার পরিশোধ করবে। এই হিসেবে কেউ যদি এক লক্ষ ভিউয়ার পায়, তাহলে সে গুগল এ্যাডসেন্স থেকে মাসে (৯০ + ১২৫) = ২১৫ ডলার আয় করতে পারবে। ওয়েবসাইটের বা ব্লগের CPC,  Page RPM ও Page CTR  যত বেশী হবে গুগল এ্যাডসেন্স থেকে তত বেশী আয় করা যাবে। সাধারনত ওয়েবসাইটের বা ব্লগের কনটেন্ট এর মান, র‌্যাংকিং এবং বিজ্ঞাপনের লোকেশনের উপর ভিত্তি করে CPC ও RPM কম বেশী হয়ে থাকে। এজন্য ভালো কনটেন্ট এর সমন্বয়ে উন্নত দেশের বিজ্ঞাপনকে  টার্গেট করতে পারলে এ্যাডসেন্স CPC ও RPM বৃদ্ধি করে ওয়েবসাইটের বা ব্লগের আয় বাড়ানো যাবে।

কি কারনে এ্যাডসেন্স থেকে আয় কম হয়?:

  • ওয়েবসাইট/ব্লগে যথেষ্ট পরিমান পোষ্ট না থাকলে
  • যথেষ্ট পোষ্ট নাই মানেই হচ্ছে ভিজিটর নাই
  • ভিজিটর নাই মানে এ্যাড ক্লিক নাই
  • ওয়েবসাইট/ব্লগের কন্টেন্ট পাঠকদের জন্য হেল্পফুল না হলে
  • পছন্দ করা টপিক/কীওয়ার্ড এর সিপিসি কম হলে
  • ওয়েবসাইট/ব্লগ নিয়মিত আপডেট না করলে
  • ওয়েবসাইট/ব্লগের সঠিক জায়গায় এ্যাডস্লট না বসালে
  • সঠিক সাইজের এ্যাডস্লট ব্যবহার না করলে
  • টেক্সট এবং ইমেজ টাইপ এর এ্যাডস্লট ব্যবহার না করলে
  • ওয়েবসাইট/ব্লগের অধিকাংশ ভিজিটর বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানি হওয়ার জন্য সিপিসি এবং সিটিআর একদমই কম পাওয়ায় করনে

কিভাবে এ্যাডসেন্স থেকে আয় বাড়ানো যায়?:

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ওয়েবসাইট/ব্লগ ডিজাইন এবং ইউজার ফ্রেন্ডলী নেভিগেশন ব্যবহার করা।
  • ওয়েবসাইট/ব্লগের জন্য একটি প্রিমিয়াম এবং এ্যাডসেন্স অপ্টিমাইজড থিম ব্যবহার করা।
  • ওয়েবসাইট/ব্লগের নিয়মিত ফ্রেশ এবং ইউনিক কন্টেন্ট পাবলিশ করা যেগুলো পাঠকের সমস্যা সমাধান করতে পারে।
  • বড় এবং সঠিক সাইজের এ্যাডস্লট ব্যবহার করা (সুপারিশকৃত এ্যাডস্লট সাইজঃ রেসপন্সিভ এ্যাডস্লট, ৭২৮*৯০, ৩০০*৬০০ এবং ৩৩৬*২৮০)।
  • এ্যাডসেন্স এর এ্যাড গুলোকে পেইজ এর এমন স্থানে বসাতে হবে যাতে ভিজিটরদের চোখে খুব সহজেই আসে। অর্থাৎ ওয়েবসাইটএর টপে এ্যাডসেন্স এর কোড বসিয়ে দিতে হবে।
  • পেইজ “স্ক্রল (Scroll)” করে নিচে আসার পরে এ্যাড দেখা যাবে এমন কোথাও এ্যাড না বসানোই ভাল। কারন ওয়েবসাইট এর কন্টেন্ট ভিজিটরদের ভাল না লাগলে সে কখনোই পেইজ স্ক্রল করবে না, যার ফলে ক্লিক ও পাওয়া যাবেনা।
  • পোষ্ট টাইটেলে, পোষ্টের মাঝখানে, হেডারে এবং পোষ্টের শেষে এ্যাড বসানো যেতে পারে। এটি গুগলের অফিসিয়াল ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন দিয়ে করা যায়।
  • টেক্সট এবং ইমেজ উভয় টাইপের এ্যাডস্লট ব্যবহার করা।
  • সার্চ বক্সের জন্য এ্যাডসেন্স কাষ্টম সার্চ বার ব্যবহার করা।
  • লো পেয়িং এ্যাডভার্টাইজারদের ব্লক করা।
  • নিয়মিত সাইটের এস.ই.ও করা এবং সাইটে সার্চ ট্রাফিক নিয়ে আসা।
  • ভিজিটরদেরকে সব সময় খুশী রাখার চেষ্টা করতে হবে। ওয়েবসাইট এর রং এর সাথে মিলিয়ে গুগল এ্যাডসেন্স এর এ্যাড বসাতে হবে। এই ব্যাপারটিকে “Blending” বলে। এর ফলে ভিজিটরদের চোখে ওয়েবসাইট এর ডিজাইনের কোন রকম তারতম্য দেখা যাবে না। এর ফলে খুব সহজেই এ্যাড এ ক্লিকপওয়া যাবে।
  • কন্টেন্ট এর সাথে অথবা কন্টেন্ট এর মাঝে মাঝে গুগল এ্যাডসেন্স এর এ্যাড বসিয়ে দিতে হবে। এর ফলে ওয়েবসাইট এর টেক্সট এর সাথে গুগল এ্যাডসেন্স এর টেক্সটএর মিল থাকবে এবং এ্যাড এ ক্লিক পড়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
  • ওয়েবসাইট যে বিষয় নিয়ে বানানো তার প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড মেটা ট্যাগ এর মাঝে লিখে দিতে হবে। শুধু শুধু অপ্রাসঙ্গিক হাই-পেইং কী-ওয়ার্ড বসানো যাবেনা। এতে হিতে-বিপরীত হতে পারে। উদাহরনঃ ধরুন একটি সাইট আছে যা ভিজিটরদের কোড সাপোর্ট দিয়ে থাকে, এখন যদি এখানে “মেডিকেল সার্ভিসের এ্যাড” দেখানো হয় তাহলে ব্যাপারটা ওয়েবসাইট এর জন্য ভাল হবে না।
  • ওয়েবসাইটে কখনো এক-সাইজের ব্যানার এ্যাড বসানো উচিত না। গুগল বিভিন্ন সাইজের ব্যানার এ্যাড এর কোড দিয়ে থাকে। ওয়েবসাইট এর সুবিধামত ব্যানার এ্যাড বসাতে হবে।
  • কোন এ্যাড থেকে বেশি আয় হয় এটাও জানা দরকার। এই ব্যাপারটি জানতে হলে Channel ব্যবহার করতে হবে। তাহলে এর মাধ্যমে জানা যাবে কোন চ্যানেল থেকে বেশি আয় হচ্ছে। গুগল এডসেন্স এ সর্বোচ্চ ২০০টি চ্যানেল বানানো যায়।
  • ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়াতে হবে। তথ্যবহুল ও ভাল ভাল পোষ্ট করতে হবে। তাহলে ওয়েবসাইট এ ভিজিটর আসবে। আর ভিজিটর আসা মানেই গুগল এ্যাডসেন্স এ ক্লিক পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

কিভাবে এ্যাডসেন্স একাউন্ট ব্যান হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়?

  • স্টেটকাউন্টারের সাহায্যে ওয়েবসাইট/ব্লগের এ্যাড এর উপরে ক্লিক পর্যবেক্ষণ করা এবং আইপি সহ ইনভ্যালিড ক্লিক সনাক্ত করা।
  • যদি কোন ক্লিক ইনভ্যালিড মনে হয় তাহলে গুগলের কাছে রিপোর্ট করা উচিত।
  • কখনই নিজের এ্যাডে নিজে ক্লিক করা যাবে না।
  • ওয়েবসাইট/ব্লগে কপি/পেষ্ট কন্টেন্ট ব্যবহার করা যাবে না।
  • একই সময়ে বা একই নামে একটার বেশি এ্যাডসেন্স একাউন্ট ব্যবহার করা যাবে না।
  • একটা পেজ/পোষ্টে ৩টার বেশী এ্যাডস্লট ব্যবহার না করা।
  • এ্যাড সাইজ বা কোড কাষ্টোমাইজ না করা।
  • কোথাও থেকে ট্রাফিক না কিনা।
  • যে ওয়েবসাইট/ব্লগে এ্যাডসেন্স ব্যবহার করা হবে তার ঠিকানা কাউকে না বলা।




এ্যাডসেন্স থেকে আয় করা টাকা কিভাবে হাতে পাবো?

গুগল দুই ভাবে টাকা দেয়। ওয়েষ্টার্ন ইউনিয়ন এবং ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে। গুগল থেকে পেমেন্ট পাওয়ার জন্য এ্যাডসেন্স একাউন্ট এ নাম, এড্রেস এবং ব্যাংক একাউন্ট দেয়া থাকতে হবে। প্রতিদিনের ইনকাম এ্যাডসেন্স একাউন্ট এ যোগ হতে থাকবে। ১০ ডলার হলে গুগল উল্লেখিত এড্রেস এ একটি পিন পাঠাবে এড্রেস ভেরিফাই করার জন্য। তারপর ভেরিফাই হয়ে গেলে একাউন্ট এ ১০০ ডলার হলে গুগল ব্যাংক একাউন্ট এ সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দিবে। ১০০ ডলার এর নিচে হলে পরবর্তী মাস এর ইনকাম এর সাথে পাওয়া যাবে। ১০০ ডলার এর নিচে কোন পেমেন্ট গুগল পাঠায় না। প্রত্যেক মাসের ২৩-২৫ তারিখের মধ্যে এই টাকা ব্যাংক একাউন্ট এ পাঠিয়ে দিবে

পরিশেষে নিম্নোলিখিত বিষয় গুলি সম্পর্কে এ্যাডসেন্স এ আবেদন এর জন্য সচেতন থাকতে হবে

  • এ্যাডসেন্স এ আবেদন করার সময় চ্যানেল এর কোন ভিডিওর টাইটেল যাতে বাংলা না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা ১০০% জরুরী।
  • চ্যানেল এ কোন খারাপ কিছু অথবা কপিরাইট কোন কিছু রাখা যাবে না।
  • যে ঠিকানায় চিঠি পাবে ঐ ঠিকানা এ্যাডসেন্স এ দিতে হবে। তবে ঠিকানা যাই হোক না কেন নাম ঠিক থাকতে হবে।
  • এ্যাডসেন্স এ এপলাই করার ২ থেকে ৩ দিন পর আবেদন কৃত জিমেইল এর inbox চেক করতে হবে যে ম্যাসেস দিয়েছে কিনা। এ্যাডসেন্স পেলে অবশ্যই একটি ম্যাসেস দিবে। আর যদি এপরুভ না হয় তা ও জানাবে। যদি এপরুভ না হয় তাহলে কয় দিন পর আবার এপলাই করা যাবে।
  • যদি এ্যাডসেন্স এপরুভ হয় তাহলে তা লগইন করে এ্যাডসেন্স আইডিটি চ্যানেলে ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *